|
তঞ্চঙ্গ্যা ভাষার ব্যাকরণ
ক্রিয়ার কাল
ক্রিয়ার কাল : ক্রিয়া সংঘটিত হওয়ার সময়কে ক্রিয়ার কালবলা হয়। একে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- বর্তমান কাল, অতীতকাল ও ভবিষ্যত কাল।
আবার ক্রিয়া সংঘটিত হওয়ার সময় অনুসারে এই তিনকালের প্রত্যেকটিকে আবার চার ভাগে ভাগ করা যায়। অনেকের মনে হতে পারে যে, ইংরেজি Tense এর মত তঞ্চঙ্গ্যা ভাষার ক্রিয়ার কালকে ভাগ করা হয়েছে। ঠিক তা নয়। তঞ্চঙ্গ্যা ভাষা ও বাংলা ভাষার উৎস সম্ভবত এক এবং অভিন্ন। এ কারণে তঞ্চঙ্গ্যা ভাষার ব্যাকরণ ও বাংলা ভাষার ব্যাকরণের মধ্যে এক গভীর মিল খুঁজে পাওয়া যায়। এই ক্রিয়ার কাল শ্রেণিবিভাজনের সময়ও সেই মিল বজায় রয়েছে। অর্থাৎ, তঞ্চঙ্গ্যা ভাষার ক্রিয়ার কালের শ্রেণিবিভাজনও ঠিক বাংলা ভাষার অনুরূপ। নিচে তা তুলে ধরা হলো।
বর্তমান কাল :
১. সাধারণ বা নিত্যবৃত্ত বর্তমান কাল
২. ঘটমান বর্তমানকাল
৩. পুরাঘটিত বর্তমানকাল
৪. বর্তমান অনুজ্ঞা।
অতীতকাল :
৫. সাধারণ অতীতকাল
৬. ঘটমান অতীতকাল
৭. পুরাঘটিত অতীতকাল
৮. নিত্যবৃত্ত অতীতকাল।
ভবিষ্যতকাল :
৯. সাধারণ ভবিষ্যতকাল
১০. ঘটমান ভবিষ্যতকাল
১১. পুরাঘটিত ভবিষ্যত কাল
১২. ভবিষ্যত অনুজ্ঞা।
নিচে এই বার প্রকারক্রিয়ার কাল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
১. সাধারণ বা নিত্যবৃত্ত বর্তমান কাল
বর্তমান সময়ে কোন কাজ সাধারণ ভাবে বা প্রত্যহ সংঘটিত হলে, তাকে সাধারণ বর্তমান বা নিত্যবৃত্ত বর্তমানকাল বলে। যেমন-
মুই ভাত খাং। [আমি ভাত খাই]
তুই জুমত যাইত। [তুমি জুমে যাও]
তারায় ইস্কুলত যান। [তারা স্কুলে যায়]
এখানে, খাং, যাইতও যান হলো তঞ্চঙ্গ্যা ক্রিয়াপদ। এই ক্রিয়াপদ গুলোকে বিভক্ত করলে পাওয়া যায় :
_/খা + অং = খাং
_/যা + ইত = যাইত
_/যা + অন = যান
অর্থাৎ প্রত্যেকটিক্রিয়াপদ দুটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে গঠিত। একটি কৃৎধাতু এবং অপরটি বিভক্তি। এখানে, _/খা ও _/যা হলো কৃৎধাতু এবং অং, ইত, অন হলো বিভক্তি।
সাধারণ বা নিত্যবৃত্ত বর্তমান কালের ক্রিয়া বিভক্তিসমুহের একটি সারণী নিচে প্রদত্ত হলো।
পুরুষ বচন ক্রিয়া বিভক্তি গঠিত ক্রিয়াপদ
উত্তম পুরুষ একবচন অং খাং, পড়ং, কহ্অং
বহুবচন ই খেই, পুড়ি, কোই
মধ্যম পুরুষ একবচন ইত খাইত, পুড়িত, কোইত
বহুবচন ইয়/য়্য খায়্য, পুড়িয়্য/পুজ্য, কুয়্য
নাম পুরুষ একবচন য়, এ খায়, পড়ে, কহ্য়
বহুচন অন খান, পড়ন, কহ্ন
সাধারণ বা নিত্যবৃত্ত বর্তমানকালের বাক্য গঠনের নিয়ম :
অস্তিবাচকবাক্য গঠনের নিয়ম : তঞ্চঙ্গ্যা ভাষার অস্তিবাচক বাক্য গঠনের নিয়মটা ঠিক বাংলা ব্যাকরণের মতই। অর্থাৎ প্রথমে কর্তা, এরপর কর্ম এবং সবশেষে ক্রিয়া বসাতে হয়। নিচের সারণীতে লক্ষ্য করুন।
কর্তা + কর্ম + ক্রিয়া
মুই ভাত খাং।
তুই জুমত যাইত।
তারায় ইস্কুলত যান।
নেতিবাচক বাক্য গঠনের নিয়ম : নেতিবাচক বাক্য গঠনেরক্ষেত্রে অস্তিবাচক বাক্যের কর্ম ও ক্রিয়ার মধ্যস্থানে না-বোধক পদ ‘ন’ (=না) বসাতে হয়। নিচের সারণীতে দৃষ্টিপাত করলে তা সহজে অনুধাবন করতে পারবেন।
কর্তা + কর্ম + ন + ক্রিয়া
মুই ভাত ন খাং।
তুই জুমত ন যাইত।
তারায় ইস্কুলত ন যান।
অস্তি-প্রশ্নবোধক বাক্য গঠনের নিয়ম : তঞ্চঙ্গ্যা ভাষায় অস্তি-প্রশ্নবোধক বাক্য দুই ভাগে গঠন করা যায়।
(১ কর্তা ও কর্মের মধ্যস্থানে ‘কি’ পদ প্রয়োগ করে। যেমন- মুই কি ভাত খাং? তুই কি জুমত যাইত? তারায় কি ইস্কুলত যান?
(২ অস্তিবাচক বাক্যের ক্রিয়ার শেষে ‘নি’ (নি = কি ) পদ প্রয়োগ করে। যেমন- মুই ভাত খাং নি? তুই জুমত যাইত নি?তারায় ইস্কুলত যান নি?
এছাড়াও অস্তিবাচক বাক্যকে বলার ধরণ পরিবর্তন করেও প্রশ্নবোধক বাক্যে রূপান্তর করা যায়। যেমন- মুই ভাত খাং? তুই জুমত যাইত? তারায় ইস্কুলত যান?
নেতি-প্রশ্নবোধকবাক্য গঠনের নিয়ম : তঞ্চঙ্গ্যা ভাষায় নেতি-প্রশ্নবোধক বাক্য নিম্নরূপ বিধি মোতাবেক গঠন করা যায়-
(১ নেতিবাচক বাক্যের কর্তা ও কর্মের মাঝে ‘কি’ পদ বসিয়ে।
যেমন- মুই কি ভাত ন খাং? তুই কি জুমত ন যাইত? তারায় কি ইস্কুলত ন যান?
(২ নেতিবাচক বাক্যের ক্রিয়াপদের সাথে অতিরিক্ত গে/তে/দে প্রত্যয় যোগ করার পর প্রশ্নবোধক ‘নে’ ( নে = কি
পদ প্রয়োগ করে।
যেমন- মুই ভাত ন খাংগে নে? তুই জুমত ন যাইত্তে নে? তারায় ইস্কুলত ন যান্দে নে?
তাছাড়া নেতিবাচক বাক্যকে বলার ধরণ পরিবর্তন করেও প্রশ্নবোধক বাক্যে রূপান্তর করা যায়।
যেমন- মুই ভাত ন খাং? তুই জুমত ন যাইত? তারায় ইস্কুলত ন যান?
2. ঘটমান বর্তমান কাল
যে ক্রিয়ার কাজ বর্তমানে ঘটছে বা চলছে এবং যা এখনো শেষ হয়নি, তাকে ঘটমান বর্তমান কাল বলে। যেমন-
আমি বাচরত যের।[আমরা বাজারে যা্চ্ছি]
তুই ভাত রানর।[তুমি ভাত রাঁধছো]
তারায় ইন্দি আইত্তন।[তারা এদিকে আসছে]
ঘটমান বর্তমানকালের ক্রিয়া বিভক্তিসমুহের একটি সারণী নিচে প্রদত্ত হলো।
পুরুষ বচন ক্রিয়া বিভক্তি গঠিত ক্রিয়াপদ
উত্তম পুরুষ একবচন অঙর খাঙর, পড়ঙর, কহ্ঙর
বহুবচন ইর খের, পুড়ির, কোইর
মধ্যম পুরুষ একবচন অর খঅর, পড়র, কহ্অর
বহুবচন অর খঅর, পড়র, কহ্অর
নাম পুরুষ একবচন র/এর খার, পড়ের, কহ্র
বহুবচন ইদন খাইদন, পুড়িদন, কুইদন
সাধারণ বা নিত্যবৃত্ত বর্তমানকালের বাক্য গঠনের নিয়ম :
অস্তিবাচক ও নেতিবাচক বাক্য গঠনের ক্ষেত্রে সাধারণ বর্তমান কালের অস্তিবাচক ও নেতিবাচক বাক্য গঠনের নিয়ম প্রযোজ্য। অর্থাৎ,
অস্তিবাচক : কর্তা+ কর্ম + ক্রিয়া। যেমন- মুই ভাত খাঙর। তারায় কধা কুইদন।
নেতিবাচক : কর্তা+ কর্ম + ন + ক্রিয়া। যেমন- মুই ভাত ন খাঙর। তারায় কধা ন কুইদন।
অস্তি-প্রশ্নবোধকবাক্য : (১ এই জাতীয় বাক্য গঠনের বেলায়ও অস্তিবাচক বাক্যের কর্তা ও কর্মের মাঝে ‘কি’ পদটি বসাতে হয়।
অর্থাৎ, কর্তা+ কি + কর্ম + ক্রিয়া। যেমন-
মুই কি ভাত খাঙর? তারায় কি কধা কুইদন?
(২ অস্তিবাচক বাক্যের ক্রিয়াপদের সাথে অতিরিক্ত ‘তে/দে’ প্রত্যয় যোগ করার পর প্রশ্নবোধক ‘নে’ পদটি বসাতে হয়।
অর্থাৎ, কর্তা + কর্ম + (ক্রিয়া+তে/দে + নে? যেমন-
মুই ভাত খাঙত্তে নে? তারায় কধা কুইদন্দে নে?
নেতি-প্রশ্নবোধকবাক্য : (১ নেতিবাচক বাক্যের কর্তার পর ‘কি’ পদটি বসিয়ে। যেমন-
মুই কি ভাত ন খাঙর? তারায় কি কধা ন কুইদন?
(২ নেতিবাচক বাক্যের শেষে প্রশ্নবোধক ‘নে’ পদ বসিয়ে। যেমন-
মুই ভাত ন খাঙত্তে নে? তারায় কধা ন কুইদন্দে নে?
3. পুরাঘটিত বর্তমান কাল
যে ক্রিয়ার কাজ কিছু আগে শেষ হয়েছে কিন্তু তার ফল এখনো বর্তমান, তাকে পুরাঘটিত বর্তমান কাল বলে। যেমন-
আমি বাচরত গিয়্যি। [আমরা বাজারে গেছি]
তুই ভাত রান্যে। [তুমি ভাত রেঁধেছে]
তারায় ইন্দি আইচ্ছ্যন। [তারা এদিকে এসেছে]
পুরাঘটিত বর্তমানকালের ক্রিয়া বিভক্তিসমুহের একটি সারণী নিচে প্রদত্ত হলো।
পুরুষ বচন ক্রিয়া বিভক্তি গঠিত ক্রিয়াপদ
উত্তম পুরুষ একবচন ইয়ং/য়্যং খায়্যং, পুজ্যং, কুয়্যং
বহুবচন ইয়ি/য়্যি খায়্যি, পুজ্যি, কুয়্যি
মধ্যম পুরুষ একবচন য়্যইত খায়্যইত, পুজ্যইত, কুয়্যইত
বহুবচন য়্য খায়্য, পুজ্য, কুয়্য
নাম পুরুষ একবচন য়্যে খায়্যে, পুজ্যে, কুয়্যে
বহুবচন য়্যন খায়্যন, পুজ্যন, কুয়্যন
পুরাঘটিত বর্তমান কালের বাক্যগঠনের নিয়ম :
অস্তিবাচকবাক্য : অস্তিবাচক বাক্য গঠনের ক্ষেত্রে সাধারণ বর্তমান কালের অস্তিবাচক বাক্য গঠনের নিয়ম এথানেও প্রযোজ্য। অর্থাৎ, অস্তিবাচক : কর্তা+ কর্ম + ক্রিয়া।
যেমন- মুই ভাত খায়্যং। তারায় কধা কুয়্যন।
নেতিবাচকবাক্য : নেতিবাচক বাক্য গঠনের বেলায় সাধারণ বর্তমান কালের নেতিবাচক বাক্য গঠনরীতি এখানে প্রযোজ্য হলেও ‘ন’ পদটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। পুরাঘটিত বর্তমান কালের বাক্যে ‘ন’ পদটি দীর্ঘস্বর হয়। অর্থাৎ, ‘নঅ’ উচ্চারিত হয়। অপরদিকে ক্রিয়াপদ হিসেবে সাধারণ বর্তমান কালের ক্রিয়াপদই ব্যবহৃত হয়। পুরাঘটিত বর্তমান কালের ক্রিয়াপদ এখানে সরাসরি ব্যবহৃত হয় না।যেমন-
মুই ভাত নঅ খাং।[আমি ভাত খাই নি]
তারায় কধা নঅ কহন। [তারা কথা বলে নি]
বি:দ্র: উপরিস্থিত বাক্য দুটি লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, বাংলা ব্যাকরণে পুরাঘটিত বর্তমান কালের নেতিবাচক বাক্য তৈরি করতে হলে ‘না’ পদটির স্থলে ‘নি’ পদটি ব্যবহৃত হয় এবং ক্রিয়াপদ হিসেবে সাধারণ বর্তমান কালের ক্রিয়াপদটি ব্যবহৃত হয়। তঞ্চঙ্গ্যা ভাষার ক্ষেত্রেও ঐ একই নিয়ম প্রযোজ্য।
অস্তি-প্রশ্নবোধকবাক্য : (১ এই জাতীয় বাক্য গঠনের বেলায়ও অস্তিবাচক বাক্যের কর্তা ও কর্মের মাঝে ‘কি’ পদটি বসাতে হয়। অর্থাৎ, কর্তা+ কি + কর্ম + ক্রিয়া। যেমন-
মুই কি ভাত খায়্যং? তারায় কি কধা কুয়্যন?
(২ অস্তিবাচক বাক্যের ক্রিয়াপদের সাথে অতিরিক্ত ‘গে/দে’ প্রত্যয় যোগ করার পর প্রশ্নবোধক ‘নে’ পদটি বসাতে হয়।
অর্থাৎ, কর্তা + কর্ম + (ক্রিয়া+গে/দে ) + নে? যেমন-
মুই ভাত খায়্যঙ্গে নে? তারায় কধা কুয়্যন্দে নে?
নেতি-প্রশ্নবোধকবাক্য : (১ নেতিবাচক বাক্যের কর্তার পর ‘কি’ পদটি বসিয়ে। যেমন-
মুই কি ভাত নঅ খাং? তারায় কি কধা নঅ কহ্ন?
(২ নেতিবাচক বাক্যের শেষে প্রশ্নবোধক ‘নে’ পদ বসিয়ে। যেমন-
মুই ভাত ন খাঙ্গে নে? তারায় কধা ন কন্দে নে?
চলবে .....
Categories: Blogs
The words you entered did not match the given text. Please try again.
Oops!
Oops, you forgot something.